Home রাজনীতি নতুন দলের মঞ্চে অভ্যুত্থানের নায়করা

নতুন দলের মঞ্চে অভ্যুত্থানের নায়করা

22
ছবি: সংগৃহীত

নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ, প্রতিশ্রুতি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের

নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুক্রবার (১ মার্চ) বিকাল সোয়া ৪টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে দলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াতের পর গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয় এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

এনসিপি আত্মপ্রকাশ: জনসমাগমে কানায় কানায় পূর্ণ মানিক মিয়া এভিনিউ

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কেও বিপুল জনসমাগম হয়। দক্ষিণ প্লাজার সামনের অংশ থেকে খামারবাড়ি পর্যন্ত মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়।

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি নিজ নিজ ধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নেন।

‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই মূল লক্ষ্য’ – এনসিপি নেতাদের বক্তব্য

বক্তৃতা পর্বে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল্লাহ হায়দার বলেন,
“গত ৫৩ বছরে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। তরুণদের নেতৃত্বে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন,
“জাতীয় নাগরিক পার্টি মনে করে, শহীদ ও আহতদের আদর্শ ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে জাতীয় স্বার্থে সবাইকে এক হতে হবে।”

এরপর মঞ্চে আসেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়করা, যাদের মধ্যে ছিলেন নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেন।

দেশের সংস্কার ও দুর্নীতি দূর করতে আশাবাদী জনগণ

সমাবেশে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে জনতা মিছিল নিয়ে আসে।

বগুড়া থেকে আসা রায়হান বলেন,
“নতুন এই দলের হাত ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত হবে। সংস্কারের যে প্রত্যাশা নিয়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, সেটি বাস্তবায়ন হবে।”

কল্যাণপুর থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব এস এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,
“সারা জীবন সব রাজনৈতিক দল দেখেছি। এবার তরুণরা এগিয়ে এসেছে। আশা করি, তারা দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে।”

আহত আন্দোলনকারীদের সমর্থন

জুলাই অভ্যুত্থনের সময় আহতরা নতুন দলকে সমর্থন জানাতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আহমেদ বলেন,
“দেশের দুর্নীতি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে এনসিপি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।”

ভোলা থেকে গুলশানে এসে আহত হওয়া শাকিল হোসেন স্ট্রেচারে ভর করে সমাবেশে আসেন এবং বলেন,
“আমি এসেছি নতুন দলকে উৎসাহ দিতে। অনৈতিক ব্যবস্থাগুলো বিলুপ্ত হোক—এটাই চাই।”

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ

বিপুল জনসমাগম ও ‘ব্যাপক জমায়েতের’ লক্ষ্য সামনে রেখে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সড়কের ওপর মঞ্চ তৈরি করায় মিরপুর সড়কের আড়ং থেকে খামারবাড়িমুখী রাস্তা বন্ধ ছিল। বিকাল ৩টার পর থেকে খামারবাড়ি থেকে আড়ংমুখী সড়কেও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাময়িক অসুবিধার জন্য এনসিপি দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ দিন

জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশে দলের নেতা-কর্মীরা, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত আন্দোলনকারী এবং বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

নতুন দল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনে কী ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, তা নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here