Home আন্তর্জাতিক গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৩৩০, বেশিরভাগ নারী-শিশু

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৩৩০, বেশিরভাগ নারী-শিশু

4
ছবি: রয়টার্স
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৩৩০, যুদ্ধবিরতির অচলাবস্থা আরও ঘনীভূত

গাজা উপত্যকায় মঙ্গলবার ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চালানো বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩০ জনে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। কয়েক শ মানুষ আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

গাজার উত্তরাঞ্চল, গাজা সিটি, দেইর আল বালাহ, খান ইউনিস এবং রাফাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের মাঝারি পর্যায়ের কমান্ডার, শীর্ষ নেতা এবং সংগঠনের অবকাঠামোগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, নিহতদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক, যাদের মধ্যে অসংখ্য শিশু রয়েছে।

ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে নতুন সংঘর্ষ

গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল। তবে এর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও তা সফল হয়নি। ইসরায়েলি বাহিনী সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালালেও, মঙ্গলবারের হামলার মাত্রা ছিল অনেক বেশি।

হামাসের প্রতিক্রিয়া ও ইসরায়েলের অবস্থান

হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল এই হামলার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করেছে এবং গাজায় আটক থাকা ৫৯ জন জিম্মির ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। অপরদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় অভিযোগ করেছে, হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়নি এবং মার্কিন মধ্যস্থতাকারী স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

ওয়াশিংটনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েল এই হামলা চালানোর আগে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি আরও বৃদ্ধি করা হবে।

গাজায় মানবিক সংকট চরমে

ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, পানি ও ওষুধের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যা আহতদের চিকিৎসায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা

মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও, ইসরায়েল গাজা থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করতে এখনো অনাগ্রহী। প্রথম ধাপে হামাস ৩৩ ইসরায়েলি ও ৫ থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছিল, যার বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।

১৫ মাসের যুদ্ধে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালালে ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে প্রায় পুরো উপত্যকা।

উপসংহার

গাজায় ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষ ও মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল এই সহিংসতা বন্ধে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির অনিশ্চয়তা এবং ইসরায়েলের লাগাতার হামলা ফিলিস্তিনের জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here