Home ক্রিকেট অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে পাকিস্তানের আগাম বিদায়: প্রতিবেদন

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে পাকিস্তানের আগাম বিদায়: প্রতিবেদন

18

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।

টুর্নামেন্টের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হয়েও দলটি গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে বাধ্য হয়। মোহাম্মদ রিজওয়ান-এর নেতৃত্বাধীন দলটি নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানে পরাজিত হয় প্রথম ম্যাচে এবং ভারতের বিপক্ষে ৬ উইকেটে হেরে যায়। এরপর নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশকে পরাজিত করলে, পাকিস্তানের সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। গ্রুপে সর্বোচ্চ তিন নম্বর স্থানে শেষ করতে পারবে তারা, যেখানে ভারত ও নিউজিল্যান্ড ইতোমধ্যেই সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করেছে।

দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যাই ব্যর্থতার মূল কারণ

Cricket Pakistan-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ব্যর্থতার প্রধান কারণ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। দলপতি মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং হেড কোচ আকিব জাভেদ-এর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন স্পষ্ট ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজওয়ান দলে খুশদিল শাহকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিলেন, তবে আকিব জাভেদ সেটিকে উপেক্ষা করে ফাহিম আশরাফকে একাদশে রাখেন। এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো রিজওয়ানকে হতাশ করে, এবং স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে নির্বাচন কমিটি ও অধিনায়ক একমত ছিলেন না।

এছাড়া, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB)-এর চেয়ারম্যান মোহসিন নকভি টুর্নামেন্টের আগে দুইবার স্কোয়াড পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তবে সেই পরামর্শ মানা হয়নি। ফলস্বরূপ, দলের ভরাডুবির পরেও কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি।

ভক্তদের ক্ষোভ, পরিবর্তনের দাবি

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন ভেস্তে যাওয়ার পর, পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক ম্যাচ খেলবে। তবে ভক্তদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে, এবং তারা পাকিস্তান ক্রিকেটের কাঠামোগত পরিবর্তনের জোরালো দাবি জানাচ্ছে।

এটি ছিল পরপর তিনটি আইসিসি ইভেন্টে গ্রুপ পর্ব থেকেই পাকিস্তানের বিদায়, ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে একই রকম পরিণতি হয়েছিল।

বর্তমান ক্রিকেটের আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ না করে, পাকিস্তান এখনও পুরনো ধীরগতির কৌশলে আটকে আছে। তাদের ব্যাটিং লাইনআপের আগ্রাসনের অভাব ছিল স্পষ্ট, যেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১ ডট বল এবং ভারতের বিপক্ষে ১৪৭ ডট বল খেলেছে তারা।

বিশেষ করে, দলের প্রধান ওপেনার ফখর জামান চোটে ছিটকে যাওয়ায় ব্যাটিং লাইনআপ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁর পরিবর্তে আসা ইমাম-উল-হক তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি। অন্যদিকে, দলের প্রধান ব্যাটসম্যান বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

দুর্বল পেস আক্রমণ ও নেতৃত্বের অস্থিরতা

পাকিস্তানের ঐতিহ্যগত শক্তি পেস বোলিং, তবে এই টুর্নামেন্টে শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, এবং হারিস রউফ প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। তাদের গতি ও আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের অভাব ছিল স্পষ্ট, যা পাকিস্তানকে বিপদে ফেলে।

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের নিয়মিত পরিবর্তন এবং অস্থিরতা দলের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। গত তিন বছরে পাকিস্তান চারজন আলাদা অধিনায়ক, আটজন কোচ, এবং অসংখ্য নির্বাচক পরিবর্তন করেছে। এমনকি বিশ্বকাপজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ গ্যারি কারস্টেন-ও এই বিশৃঙ্খলা সামলাতে পারেননি।

নেতৃত্বের এই অস্থিতিশীলতা ও ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলা পাকিস্তান ক্রিকেটের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন ভক্তরা চাইছেন দলের গঠনমূলক পুনর্গঠন এবং আধুনিক ক্রিকেটের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here