রমজান মাস এলেই মুসলিম বিশ্বজুড়ে ইফতার আয়োজনে থাকে নানা ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবার। বিভিন্ন দেশে ইফতারের খাবারের ধরন ভিন্ন হলেও এক জিনিসই সাধারণ—সবাই দিনভর রোজা রাখার পর পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার দিয়ে ইফতার করে। বাংলাদেশে ইফতারে খেজুর, ছোলা, বেগুনি, পিয়াজু, মুড়িমাখা, শরবত ইত্যাদি খাবার খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে কী ধরনের খাবার ইফতারে থাকে? আসুন, জেনে নেওয়া যাক পাঁচটি দেশের জনপ্রিয় ইফতার খাবারের সম্পর্কে।
১. মিসর – কাতায়েফ
মিসরের ঐতিহ্যবাহী ইফতার মেনুতে কাতায়েফ থাকবেই। দেখতে অনেকটা প্যানকেকের মতো এই সুস্বাদু মিষ্টান্ন তৈরি হয় বিশেষ মিশ্রণ দিয়ে। এর ভেতরে পুর হিসেবে মিষ্টি চিজ বা বাদাম দেওয়া হয় এবং এটি সোনালি রঙের মচমচে করে ভাজা হয়। পরে এর ওপরে সিরা ও চিনি ছড়িয়ে পরিবেশন করা হয়। কাতায়েফের দুটি জনপ্রিয় ধরন রয়েছে—ভাজা কাতায়েফ ও বেক করা কাতায়েফ। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এই খাবারটির ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
২. তুরস্ক – দোলমা
তুরস্কের ইফতারে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার দোলমা। এটি মূলত আঙুরপাতা, ক্যাপসিকাম বা বেল মরিচের ভেতরে সুগন্ধি মসলা, চাল ও কিমা করা মাংস ভরে তৈরি করা হয়। দোলমা সাধারণত ঠান্ডা অ্যাপেটাইজার হিসেবে পরিবেশন করা হয়, তবে দইয়ের সঙ্গে এটি প্রধান খাবার হিসেবেও খাওয়া হয়। হালকা ও সতেজ স্বাদের কারণে এটি ইফতারে প্রশান্তি এনে দেয়।
৩. মরক্কো – হারিরা স্যুপ
মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী ইফতারি ‘হারিরা’ স্যুপ, যা দেখতে অনেকটাই বাংলাদেশের হালিমের মতো। এই সুস্বাদু ও ঘন স্যুপ তৈরি হয় মসুর ডাল, ছোলা, টমেটো, আদা, পেঁয়াজ, হলুদ, দারুচিনি ও অন্যান্য মসলার সংমিশ্রণে। ধীরে ধীরে রান্না করার ফলে এটি ঘন ও সুস্বাদু হয়। ইফতারে খেজুর ও মিষ্টি পেস্ট্রির সঙ্গে পরিবেশিত এই স্যুপ দীর্ঘ সময় রোজার পর শরীরকে শক্তি জোগায়।
৪. ইন্দোনেশিয়া – মি গ্লোসর
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় ইফতারের জনপ্রিয় খাবার হলো ‘মি গ্লোসর’। এটি এক ধরনের নুডলস, যার অর্থ ‘স্লাইড’ বা ‘পিছলে পড়া’। কাসাভা ময়দা ও হলুদ দিয়ে তৈরি এই নুডলস দেখতে ও স্বাদে গমের নুডলসের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। ইফতারে এটি স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
৫. পাকিস্তান – হালিম
পাকিস্তানে ইফতারে অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হলো হালিম। এটি গম, মসুর ডাল ও মাংস (গরু, খাসি বা মুরগি) দিয়ে তৈরি করা হয়। সুগন্ধি মসলা যেমন দারুচিনি, এলাচি, লবঙ্গ ইত্যাদি দিয়ে এটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। নান বা রুটির সঙ্গে পরিবেশিত এই খাবারের ওপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বেরেস্তা, ধনেপাতা ও লেবু, যা হালিমকে করে তোলে আরও সুস্বাদু ও আকর্ষণীয়।