আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস, গুরুত্ব ও উদযাপন
নারী শ্রম আন্দোলন থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়সংগত অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন নারী শ্রমিকেরা। এই শ্রম আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
জাতিসংঘ ১৯৭৭ সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অর্জন উদযাপনের একটি বৈশ্বিক দিন। এটি লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার বার্তাও বহন করে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের উৎপত্তি ও ইতিহাস
নারী অধিকারের দাবিতে আন্দোলন বহু পুরনো। তবে নারী দিবসের ইতিহাস গড়ে ওঠে মূলত শ্রমিক নারীদের সংগ্রামের মাধ্যমে।
- ১৭৭৬: অ্যাবিগেল স্মিথ অ্যাডামস তাঁর চিঠিতে নারীদের অধিকারের বিষয়ে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসকে সচেতন করতে বলেন।
- ১৭৯২: মেরি ওলস্টোনক্র্যাফ্ট তাঁর বই “A Vindication of the Rights of Women”-এ নারীদের শিক্ষা ও সামাজিক সমতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
- ১৮৫৭: নিউইয়র্কের নারী টেক্সটাইল শ্রমিকরা ৮ মার্চ ধর্মঘট করে, যেখানে তাঁরা মজুরি বৈষম্য ও বৈরী কর্মপরিবেশের প্রতিবাদ করেন।
- ১৯০৮: নিউইয়র্কের ১৫,০০০ নারী শ্রমিক সম-অধিকারের দাবিতে রাজপথে নামেন।
- ১৯০৯: যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যালিস্ট পার্টি অব আমেরিকা প্রথমবারের মতো ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নারী দিবস’ পালন করে।
- ১৯১০: কোপেনহেগেনের ‘সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট উইমেন্স কনফারেন্স’-এ ক্লারা জেটকিন বার্ষিক আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাব দেন।
- ১৯১১: প্রথমবার ১৯ মার্চ জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।
- ১৯১৩: রাশিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হওয়া ও রুশ বিপ্লব
- ১৯১৭: রুশ নারী শ্রমিকদের ‘রুটি ও শান্তি’ আন্দোলন রাজতন্ত্রের পতন ঘটায়।
- ১৯২২: ভ্লাদিমির লেনিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করেন এবং রাশিয়ায় এই দিনে সরকারি ছুটি দেওয়া হয়।
- ১৯৪৯: চীনও নারী দিবসকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে।
জাতিসংঘের স্বীকৃতি ও আধুনিক উদযাপন
- ১৯৭৫: জাতিসংঘ প্রথমবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে।
- ১৯৭৭: জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
- ১৯৯৬: জাতিসংঘ প্রথমবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে।
- ২০১১: আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ১০০ বছর পূর্তি হয়।
- ২০২৫: দিবসটির ১১৪ বছর পূর্তি হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য
জাতিসংঘ ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ঘোষণা করেছে:
“অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন/নারী ও কন্যার উন্নয়ন”
নারী দিবস কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইকে স্বীকৃতি দেওয়া।
- লিঙ্গ সমতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি।
- নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
- বিশ্বজুড়ে নারীদের অর্জন উদযাপন।
নারী দিবস উদযাপন কিভাবে করা হয়?
- র্যালি ও কর্মশালা আয়োজন।
- নারীদের জন্য বিশেষ সম্মাননা অনুষ্ঠান।
- নারীদের অধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনাসভা।
- সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালানো।
উপসংহার
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নের বার্তা বহন করে। বিশ্বজুড়ে নারীর অগ্রগতি এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে এই দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৮ মার্চ শুধুমাত্র উদযাপনের দিন নয়, এটি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের দিনও।
এই নিবন্ধটি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ইতিহাস, গুরুত্ব ও উদযাপন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে।
এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।