Home আন্তর্জাতিক কড়াকড়ির মধ্যেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অব্যাহত নারী পাচার

কড়াকড়ির মধ্যেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অব্যাহত নারী পাচার

30
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানব পাচার: ভয়াবহ বাস্তবতা ও প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ থেকে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা থামছে না। বিশেষ করে যশোর, সাতক্ষীরা,

ঝিনাইদহ, কক্সবাজার ও কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত মানব পাচারের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

দালাল চক্র নানান কৌশলে সহজ-সরল ও নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীদের টার্গেট করে বিদেশে

কাজের লোভ দেখিয়ে পাচার করছে।

বাংলাদেশ থেকে ভারতে নারী ও শিশু পাচারের ভয়াবহতা

সম্প্রতি যশোরের শার্শার দৌলতপুর সীমান্তের এক তরুণীকে দুই বছর আগে ভারতে পাচার

করা হয়। প্রতারণার মাধ্যমে তাঁকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়েছিল। ভারতীয় পুলিশের

সহায়তায় উদ্ধার হয়ে বাংলাদেশে ফেরার পর তাঁকে পুনর্বাসন করে বাংলাদেশ জাতীয়

মহিলা আইনজীবী সমিতি (BNWLA)।

এমনই আরেকটি ঘটনায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিন কিশোরীকে ভারতে পাচারের চেষ্টা করা

হচ্ছিল। ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে পাচারকারীদের হাত থেকে বিজিবি তাঁদের উদ্ধার

করে। ফেসবুকে “নীল পাখি” নামে একটি প্রোফাইল থেকে আকর্ষণীয় চাকরির প্রলোভনে

ফাঁদে ফেলা হয় তাঁদের। এভাবেই মানব পাচারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার

করে কিশোরীদের বিভ্রান্ত করছে।

সীমান্ত দিয়ে মানব পাচারের ভয়াবহ পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) জানায়, ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি

পর্যন্ত পাচারের সময় আটক হয়েছে ১৪৫ জন, যার মধ্যে নারী ও শিশু ৫৫ জন।

জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত

১৮৬ জন নারী ও শিশুকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া গত সাত মাসে ভারত

থেকে ১০ নারী ও কিশোরীকে উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে।

পাচারের প্রধান রুট ও দালালদের কৌশল

মানব পাচারকারীরা সাধারণত নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীদের টার্গেট করে। কাজের প্রলোভন,

প্রেমের ফাঁদ, ভুয়া বিয়ের প্রতিশ্রুতি, চিকিৎসার খরচ কমানোর মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাদের

সীমান্ত পার করানো হয়।

সর্বাধিক মানব পাচার ঘটে নিম্নোক্ত সীমান্তগুলো দিয়ে:
যশোর: বেনাপোল, পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, রুদ্রপুর।
ঝিনাইদহ: মহেশপুর সীমান্ত।
সাতক্ষীরা: শাকরা ও দেবহাটা সীমান্ত।
সিলেট ও কুমিল্লা: তামাবিল ও মেঘনা সীমান্ত।

আইনি ব্যবস্থার দুর্বলতা: আসামিরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মানব পাচারের বিরুদ্ধে ১,১৩৫টি মামলা হয়েছে।

কিন্তু বিচারাধীন ৪,২৯১ মামলার মধ্যে বেশিরভাগ আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। মাত্র ৫ জনকে

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে, যেখানে ১,২৫০

জন পাচারকারী খালাস পেয়েছে।

মানব পাচার প্রতিরোধে করণীয়
  • সীমান্ত নজরদারি আরও কঠোর করতে হবে।
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
  • ভুক্তভোগীদের দ্রুত পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
  • মানব পাচার আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
সাফল্যের গল্প: প্রতিকূলতা পেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা

২০১৬ সালে ভারতের যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া যশোরের এক কিশোরী আজ ডিগ্রির শেষ

বর্ষে পড়ছেন ও চাকরি করছেন। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিয়ে বসে থাকলে

এগোতে পারতাম না। আমি বসে থাকিনি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here