সিরিয়ায় সহিংসতা: ঘরে ঘরে হামলা, রাস্তায় ছড়িয়ে আছে মরদেহ
সিরিয়ার লাতাকিয়া ও তারতুসে চলমান সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ঘরে ঢুকে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে, আর খোলা মাঠে ছড়িয়ে আছে মরদেহ।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বানিয়াসে তাঁর বন্ধুর বাগদত্তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু অস্ত্রধারীরা কাউকে তাঁকে সহায়তা করতেও দেয়নি। রক্তক্ষরণে মারা যাওয়ার পরও মরদেহ কবর দেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুস্তান আল-বাশা গ্রামে তাঁর চাচির প্রতিবেশীদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান শাসকগোষ্ঠী হায়াত আল-শামের (HTS) যোদ্ধা দাবি করা এসব সশস্ত্র ব্যক্তিরা পুরো মহল্লায় তাণ্ডব চালিয়েছে, বাসাবাড়িতে তল্লাশি করেছে এবং ২০টির বেশি গাড়ি নিয়ে গেছে।
সন্ত্রাসী হামলা ও প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড
সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের HTS-এর যোদ্ধা দাবি করলেও, একাধিক সূত্র বলছে তারা মূলত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য। পালানোর চেষ্টা করলে বা সন্দেহজনক মনে হলে সরাসরি হত্যা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।
অনেকে জীবন বাঁচাতে রাশিয়া পরিচালিত হমেইমিম বিমানঘাঁটিতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে পথে তল্লাশিচৌকিতে অস্ত্রধারীরা তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়েছে।
সিরিয়ায় পাল্টা হামলা ও ভয়াবহ সংঘর্ষ
গত বৃহস্পতিবার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত যোদ্ধারা লাতাকিয়া ও তারতুসে হামলা চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুপ্ত হামলার পর সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা হামলা শুরু করে। হেলিকপ্টার গানশিপ, ড্রোন ও কামান ব্যবহার করে আক্রমণ চালানো হয়।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘাতপ্রবণ এলাকায় হাজার হাজার সরকারি বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পাল্টা হামলা প্রতিশোধমূলক হত্যাযজ্ঞে রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাজারো মানুষের প্রাণহানি
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (SOHR) জানিয়েছে, দুই দিনে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
- লাতাকিয়া ও তারতুসে নিহতদের সংখ্যা: ৭৪৫ জন সাধারণ নাগরিক
- বাশারপন্থী যোদ্ধা নিহত: ১৪৮ জন
- নতুন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত: ১২৫ জন
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা
সৌদি আরব সিরিয়ায় চলমান সংঘর্ষকে ‘বেআইনি গোষ্ঠীর অপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং নতুন সরকারের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সব পক্ষকে সংযম দেখানো ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা জরুরি”।
নতুন সরকারের চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
সিরিয়ায় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলেও সব ধর্মীয় ও নাগরিক গোষ্ঠী এতে প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছে না, যা নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ‘ট্রানজিশনাল সরকার’ ঘোষণা করা হবে, তবে এটি কতটা স্থিতিশীল হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।