Home Uncategorized মহাসড়কে প্রবাসীদের গাড়ি লক্ষ্য করে ডাকাতি সংঘটিত হচ্ছে

মহাসড়কে প্রবাসীদের গাড়ি লক্ষ্য করে ডাকাতি সংঘটিত হচ্ছে

3
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের মহাসড়কে ডাকাতি বাড়ছে প্রকোপ: টার্গেটে প্রবাসীরা

বাংলাদেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে প্রবাসীদের লক্ষ্য করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এই ধরণের অপরাধের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। এছাড়া, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানেও ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মহাসড়কে ডাকাতির পরিসংখ্যান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

হাইওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক একাধিক ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ ১,৪৪৩ জন ডাকাতের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। ডাকাতি রোধে ৭০০ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের সুরক্ষায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ‘প্রবাসী হেল্প ডেস্ক’ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় প্রবাসীদের ভাড়া করা গাড়ির তথ্য সংরক্ষণ করা হবে এবং তাদের যাত্রা ট্র্যাকিংয়ের জন্য একটি অ্যাপ ব্যবহৃত হবে।

প্রবাসীদের গাড়ি লক্ষ্যবস্তু

বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর ডাকাতেরা বিভিন্ন স্থানে ওত পেতে থাকে, বিশেষ করে কুমিল্লা এলাকায়। তারা মেঘনা টোল প্লাজা থেকে প্রবাসীদের গাড়ি অনুসরণ করে এবং নির্জন এলাকায় পিকআপ, রড বা টায়ার ফেলে গাড়ি থামিয়ে ডাকাতি করে। গাড়িচালকদের সঙ্গেও অনেক সময় ডাকাত চক্রের যোগসাজশ থাকে।

ডাকাত চক্রের কার্যকলাপ ও পুলিশি অভিযান

কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের ২০-২৫ জনের ডাকাত দল মহাসড়কে সক্রিয়। ডাকাত দল ছয় থেকে সাতজনের একটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ডাকাতির ৭৪টি মামলা হয়েছে, যা জানুয়ারির (৭১টি) তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সরকার পতনের পর থেকে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে অন্যান্য মহাসড়কে ডাকাতির বিস্তার

ডাকাতি শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেই সীমাবদ্ধ নয়। ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-বগুড়া, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-মাদারীপুর মহাসড়কেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে।

যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি

অনেক যাত্রী এখন বাসে যাতায়াতের সময় নগদ টাকা ও ব্যাংকের কার্ড বহন করা থেকে বিরত থাকছেন। ডাকাতি বেশি হয় রাতের বেলা এবং ঈদের সময়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল ও তল্লাশির অভাব রয়েছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন।

পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে ডাকাতি

পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ডাকাতির শিকার হচ্ছে, যেখানে ডাকাতরা ভুয়া র‍্যাব ও ডিবি পরিচয়ে ট্রাক থামিয়ে লুটপাট চালায়। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পোশাক, সয়াবিন তেল, রড ইত্যাদি লুট করা হচ্ছে। কিছু চক্র শুধুমাত্র রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকবোঝাই ট্রাক ডাকাতি করে। অনেক সময় মামলা না করে টাকার বিনিময়ে সমঝোতা হয়।

বিশেষজ্ঞ মতামত ও নিরাপত্তা সুপারিশ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাসড়কে ডাকাতির সঙ্গে কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যোগসাজশ রয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রযুক্তিগত নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

উপসংহার

মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশের কঠোর অভিযান, প্রযুক্তিগত নজরদারি বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here